স্বদেশ ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে যেতে চাপ দেয়া যাবে না এবং শর্তসাপেক্ষে তাদের বাড়ি ফিরতে দিতে হবে।
ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও পুনর্বাসনের আহ্বান জানিয়ে কিছু ইসরাইলি মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটির নিন্দা জানিয়েছেন ব্লিঙ্কেন।
ব্লিঙ্কেন তার মধ্যপ্রাচ্য সফরে সর্বশেষ কাতারে ছিলেন। উত্তর গাজায় এক শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় বেশ কিছু ফিলিস্তিনি নিহতের পর তার এই মন্তব্য আসে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, জাবালিয়া এলাকায় একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের ভেতর অনেক নারী ও শিশুদের লাশ পড়ে রয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এর আগে, খান ইউনিস শহরের দক্ষিণে আরো ৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহতের খবর প্রকাশিত হয়েছে।
অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ ইসরাইলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের অতর্কিত হামলার পর ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। এরপর থেকে বেশ কয়েকবার জাবালিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পে আঘাত করা হয়েছে।
হামাসের অভিযানে ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। আরো ২৪০ জনকে পণবন্দী করা হয়েছিল।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ২২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি বোমা বর্ষণে ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১১৩ জন নিহত হয়েছে।
রোববার ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণকে শর্তসাপেক্ষে দ্রুত বাড়ি ফিরে যেতে দিতে হবে এবং তাদের গাজা ছাড়তে কোনো চাপ দেয়া যাবে না।’
ইসরাইলের ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী ব্যাজেলেল স্মটরিচ ফিলিস্তিনিদের গাজা ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে। যেন ইসরাইলিরা ‘মরুভূমিকে সাজিয়ে তুলতে পারে।’
জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন ভির সমস্যার ‘সমাধান’ হিসেবে এ সপ্তাহে ‘গাজার অধিবাসীদের অভিবাসনে উৎসাহিত’ করতে একটি আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরাইল সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গাজার অধিবাসীরা ধীরে ধীরে তাদের বাড়ি ফিরে যেতে পারবে। যদিও কিভাবে বা কখন সম্ভব হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা হয়নি।
এরই মধ্যে গাজার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চিকিৎসা সুবিধাসহ এমনকি হাসপাতালেও এখন আর নিরাপদ নয়।
ইসরাইলিরা গাজায় উচ্ছেদের আদেশ দেয়ার পর তিনটি আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা গ্রুপ মধ্য গাজার আল আকসা হাসপাতাল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেছে।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ আওয়ার প্রোগ্রামে জাতিসঙ্ঘের মানবিকবিষয়ক (ওসিএইচএ) সমন্বয়ক কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, ‘শরণার্থী প্রত্যাবাসনের এই ঘটনায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
জেম্মা কোনেল বলেছেন, হাসপাতালগুলো ইতোমধ্যেই অতিরিক্ত পরিপূর্ণ, হাসপাতালগুলো সক্ষমতার বাইরে গিয়ে তারা কিভাবে ক্রমবর্ধমান হতাহতের চিকিৎসা দিবে এটা এখন বোঝার বিষয়।
ব্লিঙ্কেনের মধ্যপ্রাচ্যের সর্বশেষ সফরে গাজার যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে এ অঞ্চলে এমন উদ্বেগ তৈরি হয়।
মঙ্গলবার দক্ষিণ বৈরুতে সন্দেহভাজন ইসরাইলি হামলায় হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা সালেহ আল আরোরিসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জন হামাসের সেনা কমান্ডার ও চারজন অন্য সদস্য।
লেবাননে ইরান সমর্থিত মুভমেন্টের হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ আরোরির হত্যাকাণ্ডকে ‘ইসরাইলি আগ্রাসন’ অভিহিত করে বলেছেন, এ হত্যাকাণ্ড শাস্তির বাইরে যাবে না।
এরপর শনিবার আরোরি হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে হিজবুল্লাহ ইসরাইলের দিকে রকেট ছোঁড়ে।
ব্লিঙ্কন বলেন, ‘এই অঞ্চলে এটা গভীর উদ্বেগের বিষয়। এটা এমন একটা দ্বন্দ্ব যা সহজে মেটা স্ট্যাসাইজ করা যায়, আরো নিরাপত্তা-হীনতা ও আরো কষ্টের কারণ হবে।’
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি বলেন, ‘আরোরি হত্যাকাণ্ড এই জটিল প্রক্রিয়াতে প্রভাবিত করেছে।’
দক্ষিণ গাজায় ইসরাইলি হামলায় আল জাজিরা ব্যুরো চিফের বড় ছেলে সাংবাদিক হামজা আল দাউদের মৃত্যুকে ‘অকল্পনীয় পরিণতি’ বলে উল্লেখ করেছেন ব্লিঙ্কন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এ যুদ্ধে অসংখ্য নিরীহ ফিলিস্তিনি পুরুষ, নারী ও শিশু মারা গেছে।’
জর্ডান, তুরস্ক এবং গ্রিসে যাত্রাবিরতির পর কাতারে পৌঁছেছেন ব্লিঙ্কন। রোববার তিনি আবুধাবি গিয়েছিলেন এবং সোমবার সৌদি আরব যাওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র : বিবিসি